কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় আওয়ামীলীগের কাউন্সিলার তালিকায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নৌকা বিরোধী বিতর্কিত ও বিএনপি নেতাকর্মীদের অন্তর্ভূক্তি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও গোপনে বসে কাউন্সিলার তালিকা চুড়ান্ত করা হচ্ছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। দ্বন্দ্ব সংঘাত লাগিয়ে রেখেও কিছু নেতা অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক টিম প্রধান জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারা রেজাউল করিমকে পেকুয়া, চকরিয়া ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক টিমের দায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এস এম গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম গত ইউপি নির্বাচনে পেকুয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে নৌকার বিরোধীতা করেছেন। তার বিরুদ্ধে ওই ৪ ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি! মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ তিনিও টৈটং ইউপি নির্বাচনে দুইবার বিদ্রাহী প্রার্থী ছিলেন। তারাই এখন মনগড়া কাউন্সিলার বানিয়ে যেনতেন ভাবে সম্মেলন করে নিতে চাচ্ছে। এভাবে হলে তাদেরকে দিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন করলে নেতাকর্মীরা কোন ভাবেই মেনে নেবে না।
পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানায়; গত ২২ এপ্রিল পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়ন আওযামীলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সম্মেলন ও কাউন্সিলে বিএনপি জামাত থেকে আগত অনেককে কাউন্সিলার তালিকায় স্থান করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি আগের অনেক কাউন্সিলারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান চৌধুরী কাউন্সিলার হতে না পারলেও তাকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এমন কি তাকে ওই কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচন করে চরম বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শিলখালী আওয়ামীলীগের সম্মেলনের পরদিনই জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ওই বিতর্কিত সভাপতি ও কমিটি বাতিল ঘোষণা করেছেন।
শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খানে আলম জানান; আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে বিএনপি থেকে ডেকে এনে নেতারা কৌশল করে সভাপতি বানিয়েছেন। তিনি দাবী করেছেন আসাদুজ্জামান চৌধুরী কোনদিন আওয়ামীলীগ করেননি। ওই বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে সভাপতি করার জন্য তার কাছ থেকে সাংগঠনিক টিম প্রধান রেজাউল করিম প্রায় ১৫ লাখ নিয়েছেন। রেজাউল করিম পেকুয়া সাংগঠনিক টিম প্রধান হওয়ার পর বিলাস বহুল গাড়ী ক্রয় করে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা এটিএম শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, উজানটিয়া ইউনিয়নে গোপনে কাউন্সিলার তালিকা প্রনয়ন করা হচ্ছে। ওই তালিকায় নৌকার বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করেছে এমন ৪৫জনকে কাউন্সিলার তালিকায় স্থান করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি জামাত থেকে আগত ১৫জনকে তালিকায় আনা হয়েছে। এমন কি আগামী কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলের ত্যাগী নেতা জিয়াবুল হক জিকু কে ষড়যন্ত্র করে আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীকে মিথ্যা তথ্য ও অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা নেতৃবৃন্দকে অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বলেছেন; তিনি গত ইউপি নির্বাচনে সদর ইউনিয়ন থেকে দলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন। তার বিরুদ্ধে ৩জন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সরাসরি নৌকার বিরোধীতা করেছিল। তারপরও তিনি ৬ হাজার ভোট পান। গত ২৭ মার্চ পেকুয়ায় উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় জহিরুল ইসলাম বক্তব্য দেওয়ার সময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়েছে।
এ সময় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, চকরিয়া পেকুয়ার এমপি ও সাংগঠনিক টিম প্রধান রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সাংগঠনিক টিম প্রধান রেজাউল করিম হামলাকারীদের আরও উস্কে দিয়েছেন। ওই হামলাকারীদের সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকলেও রেজাউল করিম তাদেরকে আস্করা দিচ্ছেন।
তিনি পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক টিম প্রধানের দায়ীত্ব পাওয়ার পর নৌকা বিরোধীদের পক্ষে হয়ে কাজ করছেন। তিনি নিজেই নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত সৃষ্টি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠে।
এ পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা পেকুয়ার সাংগঠনিক টিম প্রধানকে তার দায়ীত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া দরকার বলে মনে করছেন। পেকুয়া আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আরও জানায়, পেকুয়ায় সাংগঠনিক টিম প্রধান রেজাউলকে রেখে সম্মেলন করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশংকা আছে।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক টিম প্রধান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম বলেছেন; অনেকে অনেক ব্যবসা বাণিজ্য করেন, আমি রাজনীতি ছাড়া আর কোন পেশা বা ব্যবসা করিনা। আমি কোন অনিয়ম ও অসাংগঠনিক কাজ করতে পারি না, আমার বিরুদ্ধে কোথাও কোন অভিযোগ নেই। যা বলা হচ্ছে সব ভিত্তিহীন। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার।
পাঠকের মতামত: